রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন
সিলেট প্রতিনিধি, কালের খবর : সিলেটের রাস্তা প্রশস্তকরণ করেও যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না। বরং রাস্তা প্রশস্তকরণের পরপরই সেটি দখলের মহোৎসব চলছে। আর এই মহোৎসবের কারনে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন নগরবাসী। সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও তার শাসন ব্যবস্থার সাড়ে বছরেও সিলেটের দীর্ঘদিনের লালিত এই সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগে একইভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও। ভোটকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে জনপ্রতিনিধিরা কার্যকর ভূমিকা না রাখায় সিলেট নগর জঞ্জালমুক্ত হচ্ছে না।
এদিকে- সিলেট নগরীতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের পক্ষ থেকে কোর্ট পয়েন্ট সহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন সূত্র। ফলে চলতি রমজানে সিলেটে যানজট নিয়ে এরই মধ্যে সিলেট নগরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গতকাল সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমা কয়েকটি এলাকার লোকজন যানজট নিরসনে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন।>
সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকা। ওই স্থাপিত ওভারব্রিজ এমনিতেই ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষের পথের কাঁটায় পরিণত হয়েছে। তার উপর কোর্ট পয়েন্টের পুরোটাই এখন পরিণত হয়েছে গাড়ি স্ট্যান্ডে। সিএনজি ও লেগুনা স্ট্যান্ডের কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোর্ট পয়েন্টের যানজট কমে না। আর বিকেল হলেই ওই এলাকায় বাড়ে অবৈধ হকারদের উৎপাত। ফলে কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় রাস্তার পরিধি ব্যাপক থাকলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমছে না। সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে- নগরীর কোর্ট পয়েন্টকে জঞ্জালমুক্ত করতে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে স্থাপিত ওভারব্রিজ নগরীর হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্কয়ার কিংবা কদমতলী এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে- এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ কারণে সেটি সরানো সম্ভব হচ্ছে না। আর কোর্ট পয়েন্টের জঞ্জাল দূর করতে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষ থেকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মেয়র মৌখিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন- কোর্ট পয়েন্টে যে অস্থায়ী গাড়ি স্ট্যান্ড রয়েছে সেখানে সব সময় ১০টি লেগুনা ও ২৫ টি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়াতে পারবে। এর বেশি যানবাহন সেখানে থাকতে পারবে না। এছাড়া তাদের দাঁড়িয়ে থাকার সীমানাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা সিটি করপোরেশনের সেই নির্দেশেরও তোয়াক্কা করছেন না। তারা পুরো এলাকা দখলে নিয়ে কোর্ট পয়েন্টকে যানজটের ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। এতে করে যানজট লেগেই আছে। রমজান শুরুর পর থেকে কোর্ট পয়েন্ট পথচারীদের কাছে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যানজটের অন্যতম কারণ নগরীর ধোপাদিঘীর পাড় এলাকার অবৈধ স্ট্যান্ড। শিশুপার্ক স্থাপনের আগে ধোপাদিঘীর পাড়ে এক সময় তামাবিল-জৈন্তাপুর সড়কের বাসস্ট্যান্ড ছিল। পরবর্তীতে সেটি সরিয়ে শিবগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে- ধোপাদিঘীর পাড় থেকে অনুরাগের গলি মোড় পর্যন্ত রাস্তা গেলো দেড় দশক ধরে মুক্ত করা যাচ্ছে না। এটি ছিল মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড। এখনো সেই স্ট্যান্ড আছে। তার উপর এসে যুক্ত হয়েছে লেগুনা ও সিএনজি। কয়েকশ’ লেগুনা ও সিএনজি দখল করে নিয়ে ধোপাদিঘীর পাড় থেকে জেলরোড গলির মুখ পর্যন্ত এলাকা। রাস্তায় যাত্রী উঠানামা করার কারণে সবসময় ওই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি সময়ে সিটি মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে মেয়রের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপরও স্বস্তি মিলছে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রতিনিধিরাই এখনই কোনো বিতর্কে জড়াতে চান না। এদিকে- নগরীর আম্বরখানা এলাকায় রাস্তা দখল করে স্ট্যান্ড বসানোর কারণে যানজট কমছে না। সঙ্গে ওই রুটে চলছে ট্রাকও। দিনের বেলা ট্রাক চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে ট্রাফিক ম্যানেজ করেই চলছে ট্রাক। এতে করে যানজট কমছে না।
এদিকে- দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার সামন থেকে ক্বীন ব্রিজ পয়েন্ট হয়ে বাবনা পয়েন্ট পর্যন্ত যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামানের হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন ২৬ নং ওয়ার্ডের ভার্থখলা, ঝলপাড়া, কদমতলী এলাকাবাসী, দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বুধবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন ভার্থখলা পঞ্চায়েত কমিটি সভাপতি আলহাজ মিসবাহ উদ্দিন আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুর আহাদ, সাধারণ সম্পাদক হাজী মাহমদ আলী সাধু, সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরুল, খন্দকার মহসিন কামরান, কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন, সদস্য বাদল আহমদ, ঝালপাড়া পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জুনেদ, শাহীন আহমদ, দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচএম ইসরাইল, পরিচালনা কমিটির নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ভার্থখলা স্বর্ণালী সংঘের সভাপতি শিপল চৌধুরী, সহ-সভাপতি শাহজাহান মিয়া, বাচ্চু মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন, সহ সাংগঠনিক আফরোজ আহমদ, রুহেল আহমদ, প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আহমদ ময়না, সহ প্রচার সম্পাদক জামিল আহমদ, পাঠাগার সম্পাদক জুবের আহমদ, সহ দপ্তর সম্পাদক ইমন আহমদ, সহ আপ্যায়ন শাকিল, সদস্য আনোয়ার, হেলাল, ঝালপাড়া সূর্যমুখী সংঘের ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান রাজু প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী স্থানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন থাকার কারণে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। বিগত কয়েক মাস ধরে বাস টার্মিনাল এলাকার বেশকিছু গাড়ি রেল স্টেশনের মুখ থেকে কীনব্রিজ হয়ে বাবনা মোড় পর্যন্ত যত্রতত্র এলোমেলোভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি পথাচারীদের চলাচালে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এমনি দুর্ঘটনা, ছিনতাই, অবৈধ কার্যকলাপ সংগঠিত হচ্ছে। তাছাড়া রেলস্টেশন ও কীনব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। স্কুলের সামনে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা করাণে স্কুলের শুরুর সময় ও ছুটির সময় যখন ছাত্রীরা আসা-যাওয়া করে তখন ড্রাইভার, হেলপার ও কতিপয় যাত্রী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে নানা রকম কটুক্তি ও অশ্লীল অঙ্গ-ভঙ্গি প্রদর্শন করে যা চরম অপমানজনক ব্যাপার। কয়েকদিন আগে একটি বাস স্কুলের সামনে ছাত্রী ও তার মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে তারা গুরুতর আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জনগণ গাড়ির ড্রাইভারকে আটক করলে মালিক ও শ্রমিক কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন আগামীতে আর গাড়ি রাখা হবে না এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অথচ পরের দিন থেকে গাড়িগুলো রাস্তায় আগের মতো দেখা যায়। স্মারকলিপিতে দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার মুখ থেকে কীনব্রিজের মুখ হয়ে বাবনা পয়েন্ট পর্যন্ত কোনো গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ি ঘুরিয়ে বা দাঁড় করিয়ে প্রতিবন্ধকাত সৃষ্টি করা যাবে না এবং উক্ত সীমানার ভিতরে অবস্থিত বাস কাউন্টার সমূহের সামনে স্কুলের ছাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুবিধার্থে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোন গাড়ি রাখার দাবি জানান।
….দৈনিক কালের খবর